ইহুদী সম্প্রদায় নিজে স্বঘোষিত সন্ত্রাসবাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে জবরদখল করে, ইসরায়েলকে রাষ্ট্রে পরিনত করেছে বা তা পরিপূর্ণভাবে সব কিছু ইহুদীদের দখলে নিতে চাচ্ছে, এই চলমান ঘটনা আমরা বহু বছর ধরে দেখে আসছি,ইসরায়েল আসলেই একটি জারজ রাস্ট্র,আমরা যদি ইতিহাস একটু চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখি তাহলে এই দাঁড়ায় যে;মুসলিম প্রধান মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন নামের দেশটি তখন উসমানীয় বা অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর ইতিহাসে অটোম্যান সাম্রাজ্য বা ওসমানীয় খেলাফত এর পরাজয়ে এই সমগ্র মুসলিম প্রধান ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন। সে সময়ে পুরো ফিলিস্তিনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আরবরা এবং সংখ্যালঘু ছিল ইহুদী সম্প্রদায় এবং তারা ছিল খুবই ছোট্ট একটি জনগোষ্ঠী।অনেকদিন পরে এই উগ্রবাদী ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গঠন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় চৌকস ব্রিটেনকে। আরব এবং মুসলিমরা এই সিদ্ধান্তে অস্বীকৃতি জানান,কারণ তারা মনে করেছিলেন ছোট্ট একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের জন্য কোন দেশর প্রয়োজন নেই। সে সময়ের আরব নেতারা অনুভব করেছিলেন যে, সামান্য একটি জনগোষ্ঠী হয়ে এত অরাজকতা সৃষ্টি করে চলছে ইহুদীরা,যদি তারা একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে সমস্ত পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। এই সূত্রপাত ধরেই ইউরোপে শুরু হয় ইহুদী মুসলিম খ্রিস্টান সংঘাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন এডলফ হিটলার ইহুদীদের উশৃংখলতা এবং সন্ত্রাসবাদি মানসিকতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, ঠিক তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সব ইহুদীদের নিধন করে ফেলবেন। সে অনুযায়ী তিনি পরিকল্পনা ও করেন। কিন্তু হিটলারের মৈত্ররা তা বুঝতে পারেনি। পরিশেষে যখন নিজের মানুষ দ্বারাই হিটলার আটক হোন, ঠিক মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি তাদেরকে বলে গিয়েছিলেন; “আমি ইচ্ছা করেই কিছু ইহুদী রেখে যাচ্ছি! যা কিনা পরবর্তীতে পরবর্তী প্রজন্ম অনুধাবন করতে পারে যে আমি কেন ইহুদী নিধন করতে চেয়েছিলাম। এখন সবাই আমাকে ঘৃণা করছে এবং আমাকে দোষারোপ করছে! আজ থেকে বহু বছর পর এই ইহুদীদের দ্বারাই বিশ্ববাসী অতিষ্ঠ হয়ে পরবে। ঠিক তখন আমাকে তারা স্মরণ করবে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে”। আজ এডলফ হিটলারকে খুব বেশি মনে পরছে। হয়তো তার কথাই সত্যি হতে চলেছে। সামান্য এক কোটি ইহুদীরা সমস্ত বিশ্বটাকে অশান্তিতে পরিণত করে ফেলছে।অবাক লাগে যেখানে তারা নিজেরাই অবৈধ। ইহুদী এবং আরব সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন থেকে ব্রিটেন বের হতে বাধ্য হয়। ব্রিটেন ইহুদীদের উস্কানি দিয়ে বের হওয়ার পর ইসরায়েলের উগ্র ইহুদীরা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে নিজেরাই ঘোষণা করে,যেখানে তারা ছিলো ছোট্ট একটি জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়। ফিলিস্তিনিরা এর প্রতিবাদ করলে করলে শুরু হয় যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালে ইহুদীরা পূর্ব জেরুজালেম, গাযা এবং মিশরের সিনাই উপত্যকা ইজরায়েলের দখলে নিয়ে নেয়।তারপর দিন দিন শুরু হতে থাকে ইহুদীদের অত্যাচার নির্যাতন এবং রক্ত নিয়ে খেলা। ইহুদীরা সারা বছরই মুসলমানদের রক্ত নিয়ে খেলা করে, আর এতেই তাদের মহা আনন্দ। এরপর সামনে আসতে থাকে বিভিন্ন ইস্যু। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস বা আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদের ভূখন্ডে থাকলেও তা সম্পূর্ণরূপে দখলদারি দেখাচ্ছে ইজরায়েলি সন্ত্রাস বাহিনী। শুধু তাই নয় এই ২৭ একর জায়গা নিয়ে বিবাদ রয়েছে খ্রিস্টান ও ইহুদী এবং মুসলমানদের মধ্যে। খ্রিস্টানরা মনে করে মসজিদুল আকসা তাদের টেম্পল মাউন্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মসজিদুল আকসা কিন্ত মুসলমানদের। পবিত্র কুরআন শরীফে মসজিদুল আকসা সম্পর্কে বারবার অনেক জায়গায় বলা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র মেরাজের রাত্রে বুরাককে মসজিদুল আকসার বারান্দায় রেখে, সব নবী-রাসূলগনকে নিয়ে মসজিদুল আকসায় নামাজের ইমামতি করেছিলেন। সবমিলিয়ে সমস্ত কর্তৃত্ব যখন মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত!সেখানে উল্টো অনেক বছর ধরে মসজিদুল আকসার উপর দখলদারি দেখাচ্ছে ইজরাইলি সন্ত্রাসবাদীরা। এই ছোট্ট একটি অবৈধ জনগোষ্ঠী ইহুদী রাষ্ট্রকে আজীবন লালন-পালন এবং ভরণপোষণ করে আসছে আমেরিকা। যেখানে আমেরিকা সৌদি আরব, কাতার, দুবাই এবং মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে! ঠিক অপরদিকে ইহুদী ইসরায়েলী সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আবার তারাই সংবাদ সম্মেলনে এসে দুঃখ প্রকাশ করছে। মুসলমানদের সবথেকে ভরসার জায়গা সৌদি আরব যখন সবথেকে নীরব ভূমিকা পালন করেছিল তাদের স্বার্থের জায়গা থেকে। সেই সুযোগে আমেরিকা ইসরায়েলকে আরো উৎসাহী করার প্রয়াস ব্যক্ত করেছে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের। আমেরিকা ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন চালানোর জন্যে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল কে হাজার হাজার ডলার ফান্ড দিয়ে আসছে বহু বছর থেকে। এখন ঠিক এই জায়গায় এসে আমেরিকার কথা বা আদেশ ছাড়াই ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল হঠাৎ করে ফিলিস্তিনিদের উপর এত ফুসে ওঠার কারণ কি? এর কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমন চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান এই চারটি দেশ আমেরিকায় চিরশত্রু! এই চার দেশের ঐক্য। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পতন। যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল থাকবে তখন ইজরায়েলকে তারা কিভাবে সাহায্য সহযোগীতা করবে! আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিকভাবে ভয়াবহ বিভক্তি। এই সবগুলো কারণ মিলিয়ে এখন ইজরায়েল নিজেরাই ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে সমস্ত দখল নিতে চাচ্ছে। কেননা তারা ভাবছে; তারা হয়তো সামনে আর আমেরিকার জোরালো ভূমিকা তাদের পাশে পাবে না। তাই আমেরিকা যতটুকুই বর্তমানে তাদের পাশে আছে, এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে তারা ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ইজরায়েলে রূপান্তর করতে চায়। বর্তমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সহিংসতার মূল কারণগুলো হল এইটা। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ইহুদীরা সবসময়ই অভিশপ্ত জনগোষ্ঠী। তারা হয়তো বহু বছর ধরেই অনেককেই অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নে রেখেছিলো বা রাখছে। পরিশেষে কিন্তু তাদের ই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এখন হয়তো তারা যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইহুদী-নাসারাদের সাহায্য নিয়ে মুসলিম ফিলিস্তিনিদের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পরছে! মুসলমান নিধন করছে! কিন্তু ইতিহাস মরে না। হয়তো মুসলিম দেশগুলো তাদের নিজ স্বার্থের কারণে ঐক্য হয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে পারছে না।কালের বিবর্তনে হয়তোবা নতুন কোন হিটলার জন্ম নেবে ইহুদীদের ধ্বংস করার জন্য। তখন হয়তো মানুষ সেই হিটলারকে ভুল বুঝবে না।কারণ ইতিহাস কখনো মরে না। সেইদিন মুক্ত বাতাসে মুক্ত আকাশে পতপত করে উড়বে স্বাধীন ফিলিস্তিন এর পতাকা।