রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
সদ্যপ্রাপ্ত খবর :
অটিস্টিক শিশুদের আবাসন ও কর্মসংস্থান করবে সরকার   ||   নারীর প্রতি যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা ক্রমাগতই বাড়ছে   ||   শান্তিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতি হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা ছদরুল ইসলাম  ||

মৃত্যুর খবর শুনেও ভাইকে দেখতে গেলেন না বিজেপি নেতা

মৃনাল কান্তি দেবনাথ,আগরতলা / ২৬৪ বার পঠিত:
আপডেট সময় : শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২২
মৃত্যুর খবর শুনেও ভাইকে দেখতে গেলেন না বিজেপি নেতা

ঘড়ির কাঁটা তখন ১টা ছুঁই ছুঁই। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে অশ্রুসজল চোখে বন্ধুর বাড়িতে হাজির হন বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। সঙ্গে অন্য আরও এক বিজেপি বিধায়ক আশীষ সাহা। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেও যেখানে আসেননি শাসকদলীয় সংখ্যালঘু নেতা বাহারুল ইসলাম মজুমদার, সেখানে তার দলেরই অন্য দুই বিধায়ক এসে শোক ব্যক্ত করে গেলেন। ত্রিপুরায় বামবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে তারা সবাই একসঙ্গে রাজনীতি করেছেন।

নব্বইয়ের দশকে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের হয়ে বামবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তারা। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেউ চলে যান বিজেপিতে, কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে। এতে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে তাদের কোনো বিরোধ ছিল না। শুক্রবার মুজিবর ইসলাম মজুমদারের মৃত্যুর পর এটাই বোঝা গেছে।

গত ২৮ আগস্ট তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ত্রিপুরায় নানা কর্মসূচির আয়োজন করে বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি তাদের এই কর্মসূচি বানচাল করতে নানাভাবে আক্রমণ চালায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের ওপর।

শাসকদলীয় কর্মী-সমর্থকদের হামলায় প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুজিবর ইসলাম মজুমদার তার নিজ বাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন। পরে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার দুইদিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে তার মরদেহ নিয়ে আসা হলে রাতে সেটি মর্গে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে রাজধানী আগরতলায় মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল করে তৃণমূল। এরপর সেখান থেকে লালবাহাদুর ক্লাব সংলগ্ন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালত চত্বরে।

পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন আইনজীবী থাকায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত বার অ্যাসোসিয়েশনের সামনে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সহকর্মীরা। সেখান থেকে দুপুর ১টায় মিলনচক্রস্থিত তার নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহ।

বাসভবনে নেওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থকরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ডা. শান্তনু সেন, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়সহ প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকসহ আরও অনেকে।

প্রদেশ তৃণমূলের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক বলেন, ‘ভাই হয়ে ভাইয়ের মৃত্যুতে শোক জানাতে পারলাম না! আমরা হতবাক। ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ শিখিয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করে ভাইকে ভুলে থাকাটা কখনোই কাম্য নয়। তবে পরিবারের পাশে আমরা আছি, থাকবো।’ বিকেলে তাকে তার পৈত্রিক ভিটা দুর্গাপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তাকে দাফন করা হবে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘নোংরা রাজনীতির কারণে আজ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুজিবরকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমরা তার শেষ দেখে ছাড়বো।’ তবে তিনি জানান, প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী নয় তৃণমূল কংগ্রেস। জবাব দেওয়া হবে ভোটের বাক্সে। সাংসদ শান্তনু সেন বললেন,

বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন অবশ্য এক্ষেত্রে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বললেন, ‘কে কি বললো তাতে বিশ্বাসী নই। এটা সত্য যে, একজন মা তার ছেলেকে হারিয়েছে, একজন স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, ছেলেমেয়েরা তার বাবাকে হারালো। আমরাও আমাদের বন্ধুকে হারালাম। আক্রমণের ঘটনায় যে মামলা নেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে যাতে খুনের মামলা নথিভুক্ত হয়, আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো সংবাদ